নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নদী প্রধান বরিশাল বিভাগে খাল-ডোবা বা বাড়ির আশেপাশে পানি জমলেও এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলতি বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আক্রান্ত হয়েছে এই জনপদ। কিন্তু তুলনামূলকভাবে গত বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এডিস মশা লার্ভা বিস্তার করতে পারেনি। ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বরিশালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঋতু পরিক্রমায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ার পাশাপাশি বরিশালবাসীকে মহামারিতেও বাঁচিয়ে দিচ্ছে সাধারণের মাঝে সচেতনতা। এমনকি বৈশ্বিক মহামারি কভিড-১৯ সংক্রমণে দেশের ৮ বিভাগের মধ্যে শনাক্ত ও মৃত্যু হারে সপ্তম ছিল বরিশাল বিভাগ। অর্থাৎ অন্যান্য বিভাগের তুলনায় বরিশালবাসীর মধ্যে সচেতনতাই একটি প্রতিষেধক হিসেবে উপকারে আসছে। কিন্তু তারপরও দুশ্চিন্তায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। এজন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রতিদিনই চালানো হচ্ছে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: বাসুদেব কুমার দাস বলেন, সাধারণত শুকনো মৌসুমে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ে না। তাছাড়া এ বছর বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত দু’ চারজনের তথ্য পাওয়া গেলেও এটি সংকট আকারে ধারণ করেনি। সবচেয়ে ভয়ে ছিলাম কভিড-১৯ সংক্রমণ। কিন্তু জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সক্ষম হওয়ায় বরিশালে সংক্রমণ ও মৃত্যু হার কম ছিল। করোনার পরবর্তী ঢেউ মোকাবেলা করতেও সচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতন হলেই মানুষ বাঁচতে পাড়বে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বিগত সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডেঙ্গু মোকাবেলা করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এখন বাসিন্দারা যেমন তাদের বাড়ি-ঘরের আশপাশ, নর্দমা, ডোবা পরিস্কার রাখেন তেমনি চিকিৎসা কেন্দ্রে ডেঙ্গু রোগী এলে তাদের কিভাবে সহজে চিকিৎসা দেয়া যায় সেই কৌশল রপ্ত করেছেন। ফলে এখন আর বেগ পেতে হয় না ডেঙ্গু আক্রান্তে। তেমনি করোনার সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় প্রথম ধাক্কার মত অপ্রস্তুতের মধ্যে ফেলবে না বলে মনে করেন ডাঃ বাসুদেব কুমার দাস। তিনি বলেন, এবার যদি করোনা ছড়িয়েও পরে তাহলে পরিকল্পিতভাবেই চিকিৎসকরা তা মোকাবেলা করতে পারবে। কারণ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার হাসপাতালগুলো প্রস্তুত, আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত, অক্সিজেন প্রস্তুত। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো অভিজ্ঞতা। করোনা মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে। তাই আশা করি বড় কোন আঘাত হানতে পারবে না কভিড-১৯ এর সেকেন্ড ওয়েভ।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই হাসপাতালে কোন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি। ওই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর এস.এম সাইয়্যেদুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় এপ্রিল মাসে আর শেষ হয় অক্টোবরে। তিনি বলেন, করোনা ও ডেঙ্গু মোকাবেলায় বরিশালবাসী অনেক সচেতন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ডেঙ্গুর মৌসুমের ৭ মাসে মাত্র ৭ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মধ্যে ২৯ এপ্রিল, ২৯ অক্টোবর, ১ নভেম্বর, ১৫ নভেম্বর, ১৯ নভেম্বর, ২২ নভেম্বর এবং ২৫ নভেম্বর একজন করে ভর্তি হন। যারা প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে ডেঙ্গুর সংক্রমণের মৌসুমে অধিক আক্রান্ত না হলেও অক্টোবর ও নভেম্বরে বেশি ভর্তি হয়েছিল হাসপাতালে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এএসএম আহসান কবির বলেন, বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোন তথ্য তাদের হাতে নেই। এক কথায় এই অঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই। ওদিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৯ মাসে প্রায় দশ হাজারের ঘরে পৌঁছেছে বিভাগ। বিভাগে সর্ব প্রথম ৯ মার্চ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয় পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায়। ১০ মার্চ করোনা সংক্রমণের তথ্য তালিকা খোলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য বলছে, শনাক্তের দিন থেকে শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) পর্যন্ত ছয় জেলায় মোট আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৭৫১ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮৫ জন। আক্রান্তের মধ্য থেকে সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৮৯০ জন। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোগ নিয়ে এখন চিন্তা নেই। কারণ ডেঙ্গু রোগে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা দ্রত সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে। ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার পর্যাপ্ত কীট আমাদের কাছে রয়েছে। তেমনি করোনা নিয়ে উদ্বেগ আছে। কিন্তু আমরা আতঙ্কিত নই। আমরা সচেতনতার সাথেই মোকাবেলা করতে পারবো।
Leave a Reply